বিমানের মধ্যে টাই খুলে ফেলে, সিট্ বেল্ট বরিয়ে উঠে দাঁড়ালুম চিৎকার করে বললুম কে কোথায় আছো? পেঁজা তুলোর মতন তুলতুলে মুখ দু’জন হাওয়া-সখী ছুটে এলো- তখন মাথার ওপর ও নিচে ভূমধ্য আকাশ এবং রূপালি সাগর মাঝখানে নীল মেঘ ও ফড়িং পিছনে সন্ধেবেলার ইওরোপ জ্বলছে দাউ দাউ আগুনে সামনে প্রাচ্যদেশ জুড়ে অন্ধকার আমি কর্কশভাবে বললুম, কোথায় […]
আথেন্স থেকে কায়রো
আত্মা
প্রতিটি ট্রেনের সঙ্গে আমার চতুর্থভাগ আত্মা ছুটে যায় প্রতিটি আত্মার সঙ্গে আমার নিজেস্ব ট্রেন অসময় নিয়ে খেলা করে। আলোর দোকানে আমি হাজার হাজার বাতি সজিয়ে রেখেছি নষ্ট-আলো সঞ্জীবনী শিক্ষা করে আমার চঞ্চল অহমিকা। জাদুঘরে অসংখ্য ঘড়িতে আমি অসংখ্য সময় লিখে রাখি নারীর ঊরুর কাছে আমার পিঁপড়ে দূত ঘোরে ফেরে আমারই ইঙ্গিতে তারা চুম্বনের আগে কেঁপে […]
হঠাৎ নীরার জন্য
বাস স্টপে দেখা হলো তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ দেখেছি ছুরির মতো বিঁধে থাকতে সিন্ধুপারে–দিকচিহ্নহীন– বাহান্ন তীর্থের মতো এক শরীর, হাওয়ার ভিতরে তোমাকে দেখছি কাল স্বপ্নে, নীরা, ওষধি স্বপ্নের নীল দুঃসময়ে। দক্ষিণ সমুদ্রদ্বারে গিয়েছিলে কবে, কার সঙ্গে? তুমি আজই কি ফিরেছো? স্বপ্নের সমুদ্র সে কী ভয়ংকর, ঢেউহীন, শব্দহীন, যেন তিনদিন পরেই আত্মঘাতী হবে, […]
স্বপ্ন, একুশে ভাদ্র
কোন্ দিকে? কোন্ দিকে? আমি চিৎকার করলাম অমনি ভিড়ের ভিতরে একটা মোহর এসে ছিট্কে পড়লো। তৎক্ষণাৎ নৈঋত বাদ দিয়ে সাতদিকে সাতটা রাস্তা খুলে গেল জ্যোৎস্নায় বড় চিত্তহারী সেই পথগুলি এবং জ্যোৎস্নায় ভিড়ের প্রতিটি টুকরো শত শত হুইস্ল বাজিলে ছুটে গেল ব্যক্তিগত পথে পথে। কোন্ দিকে? কোন্ দিকে? আমি তীব্র ধাবমান কয়েকটি কলার চেপে হেঁকে উঠি, […]
সাবধান
আমি সেই মানুষ, আমাকে চেয়ে দ্যাখো আমি ফিরে এসেছি আমার কপালে রক্ত; বাষ্প-জমা গলায় বাস-ওল্টানো ভাঙা রাস্তা দিয়ে ফিরে এলাম- আমি মাছহীন ভাতের থালার সামনে বসেছি আমি দাঁড়িয়েছি চালের দোকানের লাইনে আমার চুলে ভেজাল তেলের গন্ধ আমার নিশ্বাস-। রাস্তায় একটা বাচ্চা ছেলে বমি করলো আমি ওর মৃত্যুর জন্য দায়ী- পিছনের দরজায় বস্তাভর্তি টাকা ঘুষ নিচ্ছিল […]
সকল ছন্দের মধ্যে আমিই গায়ত্রী
ছিলাম বাসনা-লঘু, ছন্দ এসে আমাকে সুসি’র হতে বলে প্রিয় বয়স্যের মতো তার দন্তপঙ্ক্তি আমি তাকে দূর হয়ে যেতে বলি নতুন বন্ধুর খোঁজে আমি ছন্দহীন হতে হতে ক্রমশ ধর্মদ্রোহী আগোপন পাষন্ড হয়ে যাই। তবু সে দরজার কাছে মুখ চুন, আমি তাকে পালঙ্কের নিচ থেকে জুতো মুখে করে আনতে হুকুম করেছি! দ্বিধা নেই, সে এনেছে, সমালোচকের কানে […]
শুধু কবিতার জন্য
শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম, শুধু কবিতার জন্য কিছু খেলা, শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা ভূবন পেরিয়ে আসা, শুধু কবিতার জন্য অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক; শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী, শুধু কবিতার জন্য এত রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়। মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা, মুধু কবিতার […]
শব্দ ২
আমায় অনুসরণ করে আঠাশ বছর পেরিয়ে আসা শব্দ যেন তাকায় অতিকুসীদ, যেন হরণ দাবি করে যেন আমার বুকের মধ্যে তুঁত পোকার মতো নড়ে অনুসরণ অনুসরণ শব্দ শব্দ ওঁ শব্দ অতিক্ষিদেয় খেয়েছিলাম সাতশো বিবেক, শব্দ বললো, ‘আমি আছি’ শব্দ আমায় ট্রাম ভাড়া দেয়, বায়োস্কোপে টিকিট কাটে খুনের রক্তে চোখ ভেসে যায়, দৈবে ঘুরি ঘোর ললাটে অন্ধকারে […]
রাখাল
লাল ও সবুজ আলোর মধ্যে অন্তকাল আমি ডাইনে তাকাই পিছনে ফিরে অন্ধকার গলিতে অনন্তকাল পিছনে নয়, ডাকদিকে নয়, সবুজ ও লাল- সুখের মতো ভূবিস্তৃত, ঊরুদ্বয়ে শোকের মতো, দৃষ্টি থেকে ঘুমের মতো পেরিয়ে যাই, কুসুম এবং ফলের কাছে বীজের মতো দীক্ষা নিতে, মৃত্যু থেকে সঙ্গোপনে শুন্য ঘরে, দ্রাক্ষাবনের ছঅই বাতাস, জ্ঞানী মাথার খুলী, নদীর ভাঙ্গা পাড়ের […]
মৃত্যুদণ্ড
একটা চিল ডেকে উঠলো দুপুর বেলা বেজে উঠলো, বিদায়, চতুর্দিকে প্রতিধ্বনি, বিদায় বিদায়, বিদায়! ট্রামলাইনে রৌদ্র জ্বলে, গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়েছিলাম আমি হঠাৎ যেন এই পৃথিবী ডেকে দেখালো আমায় কাঁটা-বেধাঁনো নগ্ন একটি বুক; রূপ গেল সব রূপান্তরে আকাশ হল স্মৃতি ঘুমের মধ্যে ঘুমন্ত এক চোখের রশ্মি দেখে অন্ধকারে মুখ লুকালো একটি অন্ধকার। হঠাৎ যেন বাতাস মেঘ […]