জলের সামনে

ব্রিজের অনেক নিচে জল, আজ সেইখানে ঝুঁকেছে মানুষ কখনো মানুষ হয়ে উঠি আমি, কখনো মানুষ নই, তবুও সন্ধ্যায় ব্রিজের খিলান ধরে ঝুঁকে থেকে মনে হয় অবিকল মানুষেরই মতো মানুষের জল দেখা, জলের মানুষ দেখা পরস্পর মুখ; মানুষ দেখেছে জল বহুদিন মানুষ দেখেছে অশ্রজল মানুষ দেখেছে মুখ অশ্রুভেজা ব্রিজের অনেক নিচে হিম কালো জলে কালো জল […]

ছায়ার জন্য

গাছের ছায়ায় বসে বহুদিন, কাটিয়েছি কোনোদিন ধন্যবাদ দিইনি বৃক্ষকে এখন একটা কোনো প্রতিনিধি বৃক্ষ চাই যাঁর কাছে সব কৃতজ্ঞতা সমীপেষু করা যায়। ভেবেছি অরণ্যে যাব-সমগ্র সমাজ থেকে প্রতিভূ বৃক্ষকে খুঁজে নিতে সেখানে সমস্তক্ষণ ছায়া সেখানে ছায়ার জন্য কৃতজ্ঞতা নেই সেখানে রক্তিম আলো নির্জনতা ভেদ করে খুঁজে নেয় পথ মুহূর্তে আড়াল থেকে ছুঠে আসে কপিশ হিংস্রতা […]

চিনতে পারোনি?

যে-কোনো রাস্তায় যে-কোনো লোককে ডেকে বলো, তুমি আমার বাল্যকালের খেলার সঙ্গী, মনে পড়ে না? কেন তোমার ব্যস্ত ভঙ্গি? কেন আমায় এড়িয়ে যাবার চঞ্চলতা! আমার অনেক কথা ছিল, তোমার জামার বোতাম ঘিরে অনেক কথা এই মুখ, এই ভূরুর পাশে চোরা চাহনি, চিনতে পারেনি? যে-কোনো রাস্তায় যে-কোনো লোককে ডেকে বলো, আমি তোমার বল্যকালের খেলার সঙ্গী মনে পড়ে […]

গহন অরণ্যে

গহন অরণ্যে আর বারবার একা যেতে সাধ হয় না- শুকনো পাতার ভাঙা নিশ্বাসের মতো শব্দ তলতা বাঁশের ছায়া, শালের বল্লরী, সরু পথ কালভার্টে, টিলার জঙ্গলে একা বসে থাকা কী-করম নিঝুম বিষন্ন বড় হিংস্র দুঃখময়। অসংখ্য আত্মার মতো লুকোনো পাখী ও প্রাণী, অপার্থিব নির্জনতা ফুলের সুবর্ণরেখা গন্ধ, সামনে ঢেউ উৎরাই- অসহিষ্ণু জুতোর ভিতরে বালি, শিরদাঁড়া ব্যথা […]

কেউ কথা রাখেনি

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলোনা পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি। মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে […]

কঙ্কাল ও শাদা বাড়ি

শাদা বাড়িটার সামনে আলো-ছায়া-আলো, একটি কঙ্কাল দাঁড়িয়ে এখন দুপুর রাত অলীক রাত্রির মতো, অররণা রয়েছে খুব ঘুমে- যে-রকম ঘুম শুধু কুমারীর, যে ঘুম স্পষ্টত খুব নীল; যে স্তনে লগৈনি দাঁত তার খুব মৃদু ওঠপড়া তলপেটে একটুও নেই ফাটা.দাগ, এ শরীর আজও ঋণী নয় এই সেই অরুণা ও রুনি নাম্মী পরা ও অপরা সুখ ও আসুখ […]

উত্তরাধিকার

নবীন কিশোর, তোমায় দিলাম ভূবনডাঙার মেঘলা আকাশ তোমাকে দিলাম বোতামবিহীন ছেঁড়া শার্ট আর ফুসফুস-ভরা হাসি দুপুর রৌদ্রে পায়ে পায়ে ঘোরা, রাত্রির মাঠে চিৎ হ’য়ে শুয়ে থাকা এসব এখন তোমারই, তোমার হাত ভ’রে নাও আমার অবেলা আমার দুঃখবিহীন দুঃখ ক্রোধ শিহরণ নবীন কিশোর, তোমাকে দিলাম আমার যা-কিছু ছুল আভরণ জ্বলন্ত বুকে কফির চুমুক, সিগারেট চুরি, জানালার […]

ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি

প্রিয় ইন্দিরা, তুমি বিমানের জনলায় বসে, গুজরাটের বন্যা দেখতে যেও না এ বড় ভয়ঙ্কর খেলা ক্রুদ্ধ জলের প্রবল তোলপাড়ের উপড়ে গেছে রেললাইন চৌচির হয়েছে ব্রীজ, মৃত পশুর পেটের কাছে ছন্নছাড়া বালক তরঙ্গে ভেসে যায় বৃদ্ধের চশমা, বৃক্ষের শিখরে মানুষের আপৎকালীন বন্ধুত্ব এইসব টুকরো দৃশ্য- এক ধরনের সত্য, আংশিক, কিন্তু বড় তীব্র বিপর্যয়ের সময় এই সব […]

ইচ্ছে

কাচের চুড়ি ভাঙার মতন মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে দুটো চারটে নিয়ম কানুন ভেঙে ফেলি পায়ের তলায় আছড়ে ফেলি মাথার মুকুট যাদের পায়ের তলায় আছি, তাদের মাথায় চড়ে বসি কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতই ইচ্ছে করে অবহেলায় ধর্মতলায় দিন দুপুরে পথের মধ্যে হিসি করি। ইচ্ছে করে দুপুর রোদে ব্লাক আউটের হুকুম দেবার ইচ্ছে করে বিবৃতি দিই ভাঁওতা […]

আরও নিচে

সিংহাসন থেকে একটু নিচে নেমে, পাথরের সিঁড়ির উপর বসে থাকি একা, চিবুক নির্ভরশীল চোখ লোকচক্ষু থেকে দূরে। ‘সম্রাটের চেয়ে কিছু কম সম্রাটত্ব’ থেকে ছুটি নিয়ে আজ হলুদ দিনাবসানে পরিকীর্ণ শব্দটির মোহে মাটির মানুষ হতে সাধ হয়। এক-একদিন একরকম হয়। আমার চোখের নীচে কালো দাগ ব্যান্ডেজের মধ্যে একটা পোকা ঢুকলে যে-রকম জাদুদন্ডসম কোনো মহিলার মতো নিয়তি […]