আল মাহমুদ

আল মাহমুদ

আল মাহমুদ বাংলা ভাষার প্রধানতম আধুনিক কবিদের একজন। ১৯৩০-এর কবিদের হাতে বাংলা কবিতায় যে আধুনিকতার ঊণ্মেষ, তার সাফল্যের ঝাণ্ডা আল মাহমুদ বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে অদ্যাবধি তুলনারহিত কৃতিত্বের সঙ্গে বহন ক’রে চলেছেন। রবীন্দ্র-বিরোধী তিরিশের কবিরা বাংলা কবিতার মাস্তুল পশ্চিমের দিকে ঘুরিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন;– আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতাকে বাংলার ঐতিহ্যে প্রোথিত করেছেন মৌলিক কাব্যভাষার […]

ফাল্গুন

শীতের ঠাণ্ডা হাতের পরশ এখনও কাঁধে সহসা কীভাবে ঘামের বিন্দু ললাটে জমলো প্রকৃতির শুকনো ডালপালা দিয়ে কে যেন রাধে মহাব্যঞ্জন সুগন্ধে তার ছড়ায় ক্ষুধা আগুনের ছোঁয়া ফাগুন এনেছে আমি ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণায় বুঝি ফেটে যায় বুক অথচ ললাটে বিন্দু বিন্দু লবণের ছোঁয়া ভেজা চিবুক ২২.০২.২০১২

পান্থপাদপ

মগজ বারুদভরা। আত্মা যাচে তোমাতে আরাম তবুও তো হাতড়ে ফিরি, যদি পাই পল্লবের ছোঁয়া, তুমি তো গন্তব্য নও, মাত্র পান্থপাদপের নাম বৃক্ষতলে পড়ে থাক অবশিষ্ট উচ্ছিষ্ট মহুয়া। আমার চলার পথে যত গাছ দিয়েছিল ছায়া তাদের নামের স্মৃতি ভুলে গিয়ে এখন কাঙ্গাল শুধু মনে পড়ে এক আমলকী ধরে ছিল কায়া হরিণের খাদ্য হয়ে তারই রক্তে হলো […]

হৃদয়ের একদিকে

হৃদয়ের একদিকে গোল হয়ে রয়েছে বেদনা। উপশম খুঁজে আমি নাগালের সমস্ত গাছের মূল উৎপাটন করে নিংড়ে রস লাগিয়েছি বুকে। ওষুধের সাধ্য নেই, প্রকৃতি পারে না দিতে আর আহারের রুচি, ঘুম, স্বপ্নের মধ্যে হেঁটে যাওয়া। বারান্দার এক কোণে বসে আছি অচিকিৎস্য, কালো। স্পর্শ দাও হে বাতাস দক্ষিণের উলঙ্গ বাতাস দাও হাত এইখানে হৃদয়ের বামে, এইখানে যেন […]

হারানো বাড়ি

বেলা পড়ে আসে দেখি চোখ ভরে ভাবতে থাকি বাড়ি ফিরে যাই যেমন অতীতে খেলার পরেই ফিরতাম বাড়ি। এখন তেমনি জাগছে বাসনা সেই পথ ধরি। খেলা শেষ করে ধুলো ঝেড়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকি, বুঝি না কোথায়, কত দূরে সেই হারানো বাড়ি। হারিয়ে ফেলেছি চেনা বাড়ি ঘর সামনের দীঘি, দুটি তালগাছ, দীঘি ভরা আছে ঢেউয়ের নিচে মাছেদের […]

ধ্বনি তরঙ্গ

বহুদূর থেকে ভেসে আসে কানে ধ্বনিত রঙ্গ বুক কাঁপে আর সুখে কেঁপে ওঠে আমার অঙ্গ কবি আমি বটে সবার আগে আমি মনুষ্য দেখি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আমার শস্য গানের আকারে প্রাণের তাগিদে আমি বেঁচে আছি সময়ের মাঝে আমার মৃত্যু নিশ্চিত নয় মৃত্যু মানেই সমাপ্তি তাই গাহি জীবনের জয় আমাকে দেখেই হাত বাড়িয়েছে ঐযে আকাশ মাটি […]

দিন শেষে

আলো আঁধারির খেলায়, দাঁড়িয়েছি শেষ বেলায় চোখে মুখে এসে পড়েছে তোমার কেশ পাখিরা গাইছে বেলা শেষ; খেলা শেষ। তবু যে কিসের গন্ধে উতলা মন আমাকে টানছে ইশারায় অনুক্ষণ আমিও চলেছি প্রবল হাওয়ার ঠেলায় কোথায় চলেছি; অদৃষ্টের কোন মেলায়।

ধৈর্য

ধৈর্য ধরে থেকেছি বহুকাল খ্যাতির ধাপে উঠল বুঝি পা, ভিতর থেকে বিমুখ মহাকাল বললো, নারে, এখনো নয়, না । ধৈর্য ধরে থেকেছি বহুদিন ভেবেছি এই বাজবে হাততালি ; ধৈর্য শুধু বাজলো রিনরিন ভুরুর নিচে জমালো ঝুলকালি । ধৈর্য ধরে থেকেছি কত মাস ওষ্ঠে বুঝি নামল করো ঠোঁট, ধৈর্য কত কাঁপালো নিঃশ্বাস ঠোঁটের পাশে রক্ত মাখা […]

কবিতা এমন

কবিতা তো কৈশরের স্মৃতি । সে তো ভেসে ওঠা ম্লান আমার মায়ের মুখ ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ছোট ভাই-বোন আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি- রাবেয়া রাবেয়া- আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিনের ভেজানো কপাট ! কবিতা তো ফিরে যাওয়া পার হয়ে হাঁটুজল নদী কুয়াশায়-ঢাকা-পথ, ভোরের আজান কিম্বা নাড়ার […]

এক নদী

তোমার মুখ ভাবলে, এক নদী বুকে আমার জলের ধারা তোলে; সামনে দেখি ভরা ভাতের থালা ঝালের বাটি উপচে পড়ে ঝোলে। পিঠার মতো হলুদ মাখা চাঁদ যেনো নরম কলাপাতায় মোড়া; পোড়া মাটির টুকরো পাত্রকে স্মৃতি কি ফের লাগাতে পারে জোড়া! নীল বইচা মাছের মতো চোখ স্বপ্নে আমায় কুশল পুছে রোজ_ ‘ভালো কি আছো?’ হায়রে ভালো থাকা! […]