যে সকল নক্ষত্রের আলো এতদিন দেখেনি পৃথিবী,
আজ সেই অক্ষমের চোখ অকস্মাত্ খুলে গেছে
আশ্বিনের চাঁদের আঘাতে। পৃথিবীর সমস্ত বিদ্যুত্
আজ পরাজিত, যেন দিগ্বিজয়ী একটি আলোর অশ্ব
ছুটে যাচ্ছে, ছুটে যাচ্ছে, ছুটে যাচ্ছে…
তার সে অপ্রতিরোধ্য গতির পুলকে,
ক্ষুরাঘাতে প্লাবিত হয়েছে বিশ্ব; আমি দগ্ধ ঐশ্বরিকে
শব্দহীন,আলোর ঔজ্জ্বল্য চোখে নিয়ে
নদীতীরে বসে আছি একা,
আমার চতুর্দিকে সেইসব নবাগত নক্ষত্রের আলো।
পশ্চাতে নানান চাঁদে একখানি কুয়াশার মালা গাঁথা হচ্ছে
জীবনানন্দীয় ধানক্ষেতে—একে কি প্লাবন বলে?
মেঘের আঙিনা থেকে ওই যে বাঙালিনী আলো দিচ্ছে
নদীর ভিতরে, এ কি শুধু চাঁদ, বহুজন ব্যবহূত চাঁদ শুধু?
একটি হিজল পাতা ভেসে যাচ্ছে চাঁদের আলোয়,
যেন ছিন্ন পাতা দিয়ে সাজানো তরণী কোনো
নিঃসঙ্গ প্রেমিকের;ভেসে যাচ্ছে কাশবন থেকে
যোগীশাসনের দিকে, এক তীব্রতমা হিজলের ডাকে।
এ কি শুধু নদী, শুধু নদী? জেলেদের গাবমাখা জালে
মাছের বদলে উঠে আসে আশ্বিনের চাঁদ।
এত ভ্রান্তি চন্দ্রলোকে, চাঁদের জ্যোত্স্নায়?
গাঙের তলার মাটি প্রিয়ার মুখের মতো স্পষ্ট বেদনায় জাগে,
একটু আঁধার শুধু থেকে যায় ছাতিমের নতুন পাতায়…
যারা দেখে নাই এই রাত্রি, এই আলো,
তাহাদের মনের মতন।
এই রাত্রি যেন দিন, যেন বিরহবিলীন ভোরবেলা,
যেন রাত্রি নয়।