পেশাগত কারণে আমার যাদের সঙ্গে কাজ করতে হয় মোটামুটি তারা সবাই উচ্চ-শিক্ষিত, এবং অনেকে রাজনীতির দিকে থেকে প্রগতিশীল। যে কোনো দাপ্তরিক সভায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে যে হাস্যরস থাকে না তা নয়। কিন্তু হাস্যরসের বিষয়কেও হঠাৎ করে যে কোনো মন্তব্য একটি অনাকাক্সিক্ষত ধরন দিতে পারে এবং তাতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠতে পারে। এমন একটি ঘটনার উল্লেখ করে বর্তমান আলোচনায় সাম্প্রদায়িকতার একটি ভিন্নমাত্রিক রূপকে ব্যাখ্যা করতে চাই।
একটি দাপ্তরিক সভা চলছিল। সভাচলাকালীন হালকা জলপানি যখন সরবরাহ করা হলো, তখন দেখি আমার একজন হিন্দু সহকর্মী কিছুই খাচ্ছেন না। জিজ্ঞেস করলে বললেন সেদিন তিনি একাদশীর উপবাসে আছেন। তখন আমার একজন মুসলমান সহকর্মী, যিনি খানিকটা কৌতুকপ্রবণ, বললেন, স্যার, উনি খাবেন না, উনি রোজা করছেন। ‘রোজা’ শব্দটি কেন বললেন সঙ্গে সঙ্গে আমার আরেকজন মুসলমান সহকর্মী সামান্য ক্ষোভ নিয়ে বললেন, ঐটাকে (হিন্দুদের উপবাসকে) রোজা বলবেন না।
সম্মানিত সহকর্মীর সতর্কবাণীটি যেন আমার মধ্যে বোতলের ছিপি খুলে দিলো। সারাক্ষণ চিন্তাটা আমার মন দখল করে রাখলো। কারণ বাংলাদেশ হবার পর থেকে সমাজে একটি জিনিস লক্ষ করে আসছি, সবকিছুর ওপর যেন ধর্মীয় পরিভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে। সেটিকে পাকিস্তানি মানসিকতাসম্পন্ন চেতনার অধিকারী মানুষেরা যেন প্রতিশোধ নেবার স্পৃহায় যা কিছু বাংলা এবং বাঙালি সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে তাকে যেন চ্যালেঞ্জ করার একটা উপায় খুঁজে নিতে সতত তৎপর। সেটি শব্দে হোক, পরিচ্ছদে হোক, কিংবা কেশ ও শ্মশ্রুবিন্যাসে হোক। এবং এ চ্যালেঞ্জটি দেয়া হয় ধর্ম নিয়ে মানুষের যে দুর্বল অনুভূতিটি আছে সেটির ওপর আঘাত করে। যেন একটি চিন্তা ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয় বাংলাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে বাঙালি মুসলমানের ধর্মপালনটা যেন ঠিক মতো হয় না।
আবার এটাও থাকে যেন বাংলাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতি যেন অন্য দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির চেয়ে নিকৃষ্ট। এবং এ কাজে ধর্মের বিভিন্ন উপসর্গের দোহাই পাড়া হয়। এ প্রচেষ্টা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক, কেননা আমার সহকর্মীর মন্তব্যে আমার হিন্দু সহকর্মীর মনে এ চিন্তা ঢুকতে পারে যে তিনি তার ধর্মের আচার অনুযায়ী যে উপবাস করছেন সেটি যেন অন্য ধর্মের একই রকম আচারের চেয়ে নিকৃষ্ট। যে চিন্তা অযৌক্তিকভাবে একটি ধর্মীয় আচারের চেয়ে আরেকটি ধর্মীয় আচরণকে শ্রেয়তর বা হেয়তর প্রমাণিত করতে চায়, সেটিই সাম্প্রদায়িক। বিশেষত বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজে এ ধারার চিন্তা বিকাশ হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। কারণ, আমার সহকর্মী রোজাকে উপবাস বলাতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, এটিতে দোষ ধরার কিছু নেই, কিন্তু এটি যখন সতর্কবাণী হিসেবে উচ্চারিত হয় তখন তার মধ্যে একটি সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতাপ্রসূত চিন্তা নিবদ্ধ আছে, যেটিকে আসলে চ্যালেঞ্জ করা দরকার। কারণ এ ধরনের চিন্তা প্রকারন্তরে মানুষকে মানুষ হিসেবে না দেখে হিন্দু বা মুসলমান হিসেবে দেখতে উৎসাহিত করে এবং এতে সমাজের মধ্যে বিভেদ বাড়ে। কিভাবে বাড়ে, তার ব্যাখ্যায় যাচ্ছি।
নিশ্চয় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় ব্যাখ্যা থেকে ‘রোজা’ উপবাস নয়, এবং ‘উপবাস‘ রোজা নয়। কিন্তু সামাজিক মেলামেশায় রোজাকে উপবাসের সমতুল্য এবং উপবাসকে রোজার সমতুল্য ভাবার চল আছে। হালকা সামাজিক মেজাজে এ ধরনের তুল্যমূল্যতার প্রচলন আছেই। শিক্ষিত শহুরে সমাজে এন্তার এরকম ব্যবহার আমরা দেখি। এবং বস্তুবাদী চিন্তা অর্থাৎ শরীরের আঙ্গিকগত চিন্তার আলোকে বলা যায়, দুটো রীতিরইÑ রোজা এবং উপবাসের শরীরগত ভিত্তি হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পেট খালি রাখা। যদি পেটের কোনো পয়েন্ট অব ভিউ আমরা স্বীকার করতে চাই, তাহলে বলতে হবে, পেট বলবে ‘রোজা’ বলেন আর ‘উপবাস’ বলেন, আমি ভাই থাকছি খালি। দুটো আচারেরই লক্ষ্য হলো সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি বিধানে পেট খালি রাখাÑ যে পেটের কোনো সাম্প্রদায়িক পরিচয় নেইÑ মুসলমানের বা হিন্দুর পেট বলে কোনো কথা নেই।
একটি শিক্ষিত পরিবেশে যখন ‘রোজা’ এবং ‘উপবাস’ সম্পর্কিত সমীকরণের বদলে অসমীকরণের চিন্তাকে প্রাধান্য দেয়া হয় তখন সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু কিছু পরিভাষাগত, সম্প্রদায়গত, শিক্ষাগত সাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্য ঐগুলোর সঙ্গে জুড়ে যায়। পরিভাষাগত : যেমন যেটা আরবিতে রমজান বা রোজা, সেটা বাংলায় উপবাস হতেই পারে, কেন না রোজার ইংরেজি ফাস্টিংও হয়, যার বাংলা উপবাস। নজরুলকে সাম্প্রদায়িকীকরণের প্রচেষ্টার একটি উদাহরণ মনে পড়ছে : তাঁর রণসঙ্গীত ‘চল, চল, চল’ গানের ‘মহাশ্মশান’ শব্দটি কেটে ‘গোরস্থান’ করা হয়েছিল। প্রকারন্তরে, বাংলা ভাষাকে অন্য ভাষার কাছে হেয় করার সাম্প্রদায়িক প্রচেষ্টা এটিতে নিহিত।
আবার আরেকটি ধর্মীয় আচার সম্পর্কেও একই রকম সিদ্ধান্তে আসা যায়। উপবাস যেমন প্রায় সকল ধর্মে একটি পবিত্র রিচ্যুয়াল বা শুচিশীল আচার, তেমনি হলো পশুর বলিদান। প্রায় সব ধর্মেই পশুর বলিদানের মাধ্যমে আত্মার শুদ্ধিকরণের আচারের প্রচলন আছে। এবং কসাইয়ের পশু জবাই (‘সøটার’) আর ধর্মীয় রিচুয়্যাল বা আচার হিসেবে পশু বলিদানের (‘স্যাক্রিফাইস’) মধ্যে পার্থক্য করার জন্য সাধারণত এ ব্যাখ্যা আসে যে কসাই পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করে লাভ করার জন্য, কিন্তু পশুর বলিদান হয় সৃষ্টিকর্তার কাছে নিবেদনের জন্য। দার্শনিক রেনে জিরার্ড তাঁর “দ্য স্যাক্রিফিসিয়াল ক্রাইসিস” শীর্ষক প্রবন্ধে বলছেন, দুটো প্রক্রিয়ার মধ্যই সহিংসতা (‘ভায়োলেন্স’) বিদ্যমান, তবে বলিদানের ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার নামে বলিদানের জন্য বলিদানকারীর আত্মায় এক ধরনের শুচিতাবোধ কাজ করে। কিন্তু পেটের ব্যাপারে যেটা বললাম, সেটা পশু বলিদানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যে কাঠামোগত দিক বা পশুর শরীরের দিক থেকে পশু জবাই আর পশু বলিদান একই ব্যাপার। অর্থাৎ, পশুর যদি কোনো পয়েন্ট অব ভিউ থাকতো, পশু বলতো যে জবাই বলেন আর বলিদান বলেন পশুহত্যা নিছক সহিংসতা। মানব সমাজের একটা বিরাটরকম সংকটময় উদ্বেগ হলো জড় ও প্রাণিজগতের বিভিন্ন উপকরণকে ব্যবহার করে ধর্মীয়ভাবে আত্মার শুচিশীল ও শুদ্ধশীল আচরণের সঙ্গে জড় ও প্রাণিজগতকে আর্থিক প্রণোদনা থেকে সৃষ্ট একইরকম আচরণের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে না পারা। অর্থাৎ, দারিদ্র্যের কারণে উপবাস থাকা আর ধর্মীয় কারণে উপবাস থাকার মধ্যে শারীরিক দিক থেকে পার্থক্য নেইÑ উভয়তই পেট খালি থাকছে। তাহলে পার্থক্যের গুরুত্ব কিভাবে বোঝা যাবে? আবার, ধর্মীয় ভক্তি এবং ধর্মীয় ব্যবসার মধ্যে সীমারেখা টানাও কঠিন হয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গটি বুঝতে আমি শেক্সপিয়ারের সাহায্য নেবো। শেক্সপিয়ারের ওপর আধুনিককালের অন্যতম বড় পন্ডিত স্টিফেন গ্রিনব্ল্যাট তাঁর একটি প্রবন্ধে বলেছেন যে ধর্মীয় উপসনালয়ে ধর্মীয় উপাসকরা টাকা-পয়সা, দ্রব্যাদি মানত দিয়ে যাচ্ছেন সৃষ্টিকর্তার নামে, কিন্তু ঐসব সঞ্চিত অর্থ দিয়ে উপসনালয়ের রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও পুরোহিত এবং তাদের পরিবারবর্গের ভরণপোষণ চলে। অর্থাৎ, ভক্তের জন্য যেটি দান, উপাসনালয়ের রক্ষকের জন্য সেটি উপার্জন। (“তা হলে শালা, / সোজা পথ দেখ!” গোস্ত্-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!” (নজরুল: “মানুষ”) গ্রিনব্ল্যাট অনত্র জিরার্ড কথিত কাঠামোগত সাদৃশ্য থেকে সৃষ্ট বিভ্রান্তির চমৎকার ব্যাখ্যা করেছেন “দ্য ইম্প্রোভাইজেশন অব পাওয়ার” শীর্ষক প্রবন্ধে শেক্সপিয়ারের ট্র্যাজেডি ওথেলো নাটকের বিশ্লেষণে।
ওথেলো জেনেছে যে (যদিও সে জানে না যে সে ভুলভাবে জেনেছে) তার স্ত্রী ডেসডেমোনা দ্বিচারিণী। ওথেলো ক্রোধান্বিত হয়ে তার অসতি স্ত্রীকে শাস্তি দিতে চায়। কিন্তু সে বদ্ধপরিকর যে সে স্ত্রীকে বধ করবে কোনো জিঘাংসা থেকে নয়, বরঞ্চ দেবতাদের কাছে বলিদানের মানসে। অর্থাৎ সে পাপিষ্ঠাকে তার পাপের জন্য দেবতাদের কাছে বলি দেবে। কিন্তু শেক্সপিয়ার অতি সূক্ষ্মভাবে ওথেলোর চিন্তার মধ্যে যে বিভ্রান্তিটুকু আছে সেটি তুলে ধরেছেন: কে ওথেলোকে এ নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে তার হত্যাটুকু হত্যা নয়, কিন্তু বলিদান? ডেসডেমোনাকে হত্যা করার ঠিক আগে ডেসডেমোনা যখন ওথেলোকে বলে যে সে কোনো পাপ করেনি, ওথেলো তখন বলে, “হে মিথ্যেবাদী মহিলা, তুমি আমার হৃদয়কে পাথরে পরিণত করেছো, এবং তাই ঘটাতে বলছো যেটাকে হত্যাকা- বলি, অথচ আমি করতে যাচ্ছি বলিদান।” (অনুবাদ বর্তমান লেখকের।)
এ প্রসঙ্গে গ্রিনব্ল্যাট মন্তব্য করছেন যে ওথেলো মনে করছে যে ডেসডেমোনা পাপ স্বীকার করলে তার বলিদানের বা স্যাক্রিফাইসের শর্ত পূরণ হয়, অর্থাৎ জিঘাংসা বা সহিংসতা থেকে সে কাজটি করেনি কিন্তু স্রেফ বলিদান করেছে তা প্রমাণিত হয়। কিন্তু ডেসডেমোনা পাপ স্বীকার না করাতে তার হত্যাটুকু বলিদান না হয়ে হত্যাকা-ে পরিণত হবার ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছিল।
ওথেলোর বিভ্রান্তি শেক্সপিয়ার আগে তাঁর অন্য একটি নাটক জুলিয়াস সিজার-এ ব্রুটাসের চরিত্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করেছিলেন। সিজারকে হত্যা করার আগে ব্রুটাস অন্য চক্রান্তকারীদের হত্যাকা- এবং বলিদানের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণস্বরূপ সতর্ক করে দেন: ‘কায়াস, আমরা হবো বলিদানকারী, কসাই নই।’ (অনুবাদ, বর্তমান লেখকের।)
ব্রুটাস এবং ওথেলোর বিভ্রান্তি এখানে যে তারা দুজনই নিজেদের হত্যাকারী হিসেবে না দেখে বলিদানকারী হিসেবে দেখতে চায়। আবার রেনে জিরার্ডের চিন্তা অনুসরণ করে বলতে হয় তারা নিজেদের ‘………’ হিসেবে না দেখে ‘……’ হিসেবে দেখতে চায়। ভুল সংশোধনকারী এবং বলিদানকারীর মধ্যে পার্থক্য হলো, জিরার্ডের মতে, ভুল-সংশোধনকারীর কাজের প্রতিক্রিয়া থাকে, যা কিনা প্রায়শই সহিংস প্রতিশোধ, কিন্তু বলিদানকারীর কাজের প্রতিক্রিয়া বা প্রতিশোধ থাকে না।
ধর্মীয় মতবাদকে যখন জঙ্গি মতবাদে রূপ দেয়া হয় তখন একটি মৌলবাদী তথা সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক মাত্রা জঙ্গিবাদের পুষ্টি সাধন করে। ব্রুটাস এবং ওথেলো যে বিভ্রান্তি এড়িয়ে গিয়ে রাইটার অব রংস থেকে নিজেদের পারফরমার অব স্যাক্রিফাইসেস অবস্থানে উপনীত করেছিল সে বিভাজন রেখাটা সাম্প্রদায়িক এবং, তৎপরবর্তীতে, জঙ্গিবাদী চিন্তার ক্ষেত্রে এতোটা সূক্ষ্ম থাকে যে সেটা এড়ানো যতো সহজ, আমল দেয়া ততোটা সহজ নয়। সাম্প্রদায়িক মাত্রাটা ধর্মে, ধর্মে, সমাজে সমাজে, গোত্রে গোত্রে, এবং মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, এবং এ মাত্রাটা বাড়িয়ে নিয়ে গেলে তখন ব্রুটাস এবং ওথেলো যেমন মনে করতে পারে যে কোনো মতবাদকে রক্ষা করা বা তার সমর্থনে (ব্রুটাসের ক্ষেত্রে রিপাবলিকানিজম এবং ওথেলোর ক্ষেত্রে ওল্ড টেস্টামেন্টের আদেশ “দাও শ্যাল্ট নট কমিট এডালটেরি” (ব্যভিচার করো না))-মানুষও হত্যা করা যায়, তেমনি বাংলাদেশে যখন “গণজাগরণ মঞ্চে”-র কর্মী রাজীবকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু জঙ্গিবাদী ছাত্র ‘নাস্তিক’ হিসেবে কথিত করে হত্যা করে, তখন তাদের এ বিশ্বাস উসকানি দেয় যে তারা যুগপৎ অন্যায়-সংশোধনকারী ও বলিদানকারী।
আমার এক সহকর্মী কর্র্তৃক আরেক সহকর্মীকে ’রোজা’ এবং ‘উপবাস’-এর মধ্যে তুলমূল্য করে না দেখার সতর্কবাণীতে আপাত দৃষ্টিতে কোনো দোষ নেই, কিন্তু ধর্মীয় চিন্তার প্রতিফলন যদি সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামোর সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়েছে দেখি, তা হলে ওপরের আলোচনার আলোকে এ সতর্কবাণীর পেছনে হিমবাহের পানির নিচে লুকানো বিশাল বরফখ-ের মতো বিশাল একটি সাম্প্রদায়িক অচলায়তন আছে দেখতে পাবো। কারণ, রোজা এবং উপবাসের মধ্যে পার্থক্য করলে প্রতীতি হয় যে দুটো রিচ্যুয়ালের তলায় যে জড় ও প্রাণীগত সাদৃশ্য আছে এখানে পাকস্থলী সেটা যেন উপেক্ষা করা হলো। অর্থাৎ, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি বস্তুতই অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।
যে জিনিসটা বলে এ আলোচনাটি শেষ করতে চাই সেটি হলো রোজা আর উপবাসের মধ্যে পার্থক্য খুঁজলে সেটি সাম্প্রদায়িকতার নেটওয়ার্কিংয়ে হয়তো প্রাথমিক স্তরে একটি নির্দোষ সূচক হয়ে থাকবে কিন্তু এটি গুরুতর সহিংস রূপ পায় যখন এ একই সাম্প্রদায়িক চিন্তার শেষ ফল হলো হত্যাকান্ড যখন মনে হয় কোনো একটা মতবাদের আজ্ঞায় বা সমর্থনে রাজীব বা কোনো মানুষ খুন করা একটি শ্রেয় কাজ।
মোহীত উল আলম : উপাচার্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।