মাধবীর অবিশ্বাস্য স্মৃতি

মাধবী কাল চ’লে যাবে। ওর হাতে ফুলগুলো তুলে দিয়ে বললাম ‘তুমিও কি ফুল হয়ে ঝ’রে যাবে?’ ও নির্বাক উদাসীন। ওর কাকের পাখার মতো কালো চোখ মুহূর্তে জলে ভ’রে এলো মৃদু কাঁপলো পাপড়িগুলো। সদ্য কেনা জ্যামিতি বকসের চকচকে পিঠের মতো ওর চোখ জ্বলজ্বল কোরে উঠলো লাল পেড়ে শাড়ির মতো ওর ঠোঁট ও কথা বলতো গানের মতো […]

আকাশ ও মানুষ

কবে থেকে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে একা, তার বুক থেকে খসে পড়েছে কত তারা। বেঁচে থাকলে আরো কত তারাই খসবে, তা নিয়ে আকাশ কি দুঃখ করতে বসবে? না, বসবে না, আমি বলছি, লিখে নাও, আকাশকে তো মহান মানি এ-কারণেই। মনুষ্যবৎ হলে কি মানুষ তাকে মানতো? প্রিয়জন চলে গেলে মানুষই ব্যথিত হয়, আকাশ নির্বিকার, আকাশ কখনও নয়। […]

হেমন্ত, ১৪২০

গণতন্ত্র ও সন্ত্রাস একই বালিশে শুয়ে আছে কার্তিকের হিমে পাকা ধানের সুবাসে, নবান্নের উৎসবে… হুড়মুড় শৈশবের স্মৃতি স্মৃতিরাশির উৎপাত… বিষণ্নতা দুশ্চিন্তা আরেক বালিশে কেবল ঝিমোয় তন্দ্রায় কাতর। পরীক্ষার প্রস্তুতির শেষে মৃতের শরীরে কে মাখে আতর? দগ্ধদেহ জিয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যায় যারা আত্মীয়-স্বজন ছাড়া সাংবাদিক আছেন মার্কামারা শোকার্ত ক্যাডার। এই হেমন্তে বাস্তবতা যতো কাছে ঢের […]

তুমি-তো বন্দিত নিত্য

তুমি-তো বন্দিত নিত্য নন্দিত নরকে বাঙালির বুকে-মুখে তোমার তারিফ; শঙ্খনীল কারাগারে, অপেক্ষা-সড়কে বহুব্রীহি শিখা জ্বেলে দারুচিনি দ্বীপ জোছনা ও জননীর গল্প বলে যায় শ্রাবণ মেঘের দিনে বাঙালির ঘরে, তাবৎ দেয়াল ভেঙে যুক্তির শিখায় যখন স্বদেশ মুক্ত বিশ্ব-চরাচরে। তুমি সেই মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তি-অস্ত্রধারী, আগুন পরশমণি, চিত্তে মানবিক; মেঘের ছায়ায় ভেসে গাঙুড়ের পাড়ি, নুহাশপল্লীর মায়া স্বর্গের অধিক। জোনাকি-আলোয় […]

বলেছিলাম

সমস্ত আবর্ত থেকে ফিরে আসো, বলেছি কি ? সে কথা বলিনি৷ বলেছিলাম, আমাদের কালপর্বে যে-ভাঙন উৎস কোথায় এই চণ্ড-সামাজিকতার ? আজকে যে-স্তরগুলি তৈরি হয়ে আছে আমরাই কি নির্মাণ করিনি ঘূর্ণিপাক ? শববাহকেরা এখন বৃত্তের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে শ্মশানযাত্রীরা নদীর ঠিকানা ভুলে দণ্ডকারণ্যের দিকে ধাবমান আর দেখো, ভূমিকে নির্ভূম করে ভূস্বামীরা আগুন দিচ্ছে চুল্লীতে সব প্রতিরোধ […]

লোকটা জানলই না

বাঁ দিকের বুক পকেটটা সামলাতে সামলাতে হায়! হায় ! লোকটার ইহকাল পরকাল গেল ! অথচ আর একটু নীচে হাত দিলেই সে পেতো আলাদ্বীনের আশ্চর্য প্রদীপ, তার হৃদয় ! লোকটা জানলোই না ! তার কড়ি গাছে কড়ি হল । লক্ষ্মী এল রণ-পায়ে দেয়াল দিল পাহাড়া ছোটলোক হাওয়া যেন ঢুকতে না পারে ! তারপর একদিন গোগ্রাসে গিলতে […]

কুটির পেছনে বাঁশবন, নদ

মুঠির ভিতরে চাঁদ, কুটির পেছনে বাঁশবন, নদ। আমার ভিতরে তুমি গড়িয়াছ সংসদ। হৃদয় বলে কিছু নাই, কে যেন বলেছিল। হয়তোবা তাই, গুরুগুরু মেঘ বিদারিল। আমি তাকে চিনি, আমাকে যে খুন করে। ‘আমি ছাড়া কে এমন ভালোবাসবে’? __শুনেছি কিন্নর স্বরে। তার কথা মনে পড়ে?___হৃদয় বলে না কিছু। ভেঙে যায় দুপাড়, নদী যায় নদের পিছু পিছু। তবে […]

যাই, যাই

আজ আবার আমার ইচ্ছা হলো যাই বর্ধমানে, সেই একটুখানি ইস্টিশনে, হাই তুলতে তুলতে যাই বটগ্রামে শিউলিতলায় যেখানে দাঁড়িয়ে আমি কোনওদিন ফটোগ্রাফ তুলি নাই হে আমার মোরগের চোখের মতন খুব ছেলেবেলা ! চলো তাকে তুলে আনি, তবু বলো আগে কেন আনি নাই ? অথচ স্বপ্নের মধ্যে শিউলি-গাছের মতো আমার মা দারুন সুগন্ধ সঙ্গে নিয়ে একনও দাঁড়িয়ে […]

কথোপকথন-১

তোমার পৌঁছতে এত দেরি হল? পথে ভিড় ছিল? আমারও পৌছতে একটু দেরি হল সব পথই ফাটা। পথে এত ভিড় ছিল কেন? শবযাত্রা?কার মৃত্যু হল? আমাদের চেনা কেউ না তো? এই তো সেদিন যোগো গেল দৌড়ে গেল,এখনও ফিরল না। আগে পরে শঙ্কর,বিমল। আমাদের যাকে যাকে প্রয়োজন তারাই পালায় দুরের সমুদ্রে চলে যায় কালো নুলিয়ারা যায় যে-রকম […]

কথোপকথন-৪১

-বৃক্ষের বল্কল দেখে মনে হয় যেন আমাদের কথোপকথনগুলো যাতে না হারায় আশ্চর্য হরফে লিখে রেখেছে উল্কির মতো নিজেদের গায়। পৃথিবীর বৃক্ষগুলো মানুষের গোপনীয়তম সমস্ত সংবাদ জানে,এমনকি তোমাকে যা কখনো বলিনি হৃদয়ের সেই সব তূর্ষনাদও আর্তনাদও জানে। -নভোমন্ডলের দিকে চেয়ে থেকে ঠিক এরকমই ভেবেছি আমিও। কোন গোপন আলমারী ঘেঁটে-ঘুঁটে তোমাকে যে-সব চিঠি লিখেছি,যা কখনো লিখিনি নক্ষত্র-অক্ষরে […]