জন্মে জন্মে যেন

এই দেশ আমাকে যে এতো ভালোবাসে, এই মাটি এতো তার বুকের মমতা দিয়ে আগলে রাখে, ছায়া দেয় সিক্ত করে আমার জীবন; এই লতাগুল্ম ফুল ও উদ্ভিদ, এই পাখি ও পতঙ্গ রাখালের মর্মরিত বাঁশি রাখালের উদাসীন গান আমাকে এতো যে মাতিয়ে রাখে, এতো যে উদ্বুদ্ধ করে আমি আজ সেই ভালোবাসার জন্য অশ্রুজল ফেলি বড় ইচ্ছা করে […]

জহির রায়হানের নীল টয়োটা

চৈত্রের খররোদ মাথায় করে বাতাসে উড়তে উড়তে এসে থামলো জহির রায়হানের নীল রঙের টয়োটা, রাস্তার ধুলো কুয়াশার মতো আস্তর বিছিয়ে ঢেকে দিয়েছে নীলরঙ, উইন্ডশিল্ডে আটকে আছে ওয়াইপারের বেদনার্ত চুম্বন, দরোজা খোলার শব্দ ছড়িয়ে পড়লো মেশিনগানের ঠা-ঠা আওয়াজ হয়ে, বললেন, এক কাপ চা খাবো। সিটের ওপর পড়ে থাকা ক্যামেরা আর কাঁচা ফিল্মের রোল দেখে বললাম, অবশ্যই। […]

দেশমন্ত্র

আর কোন মন্ত্র জানি না, জন্মেই দু’চোখ মেলে তোমাকে দেখেছি হয়তো জন্মেরও আগে তোমাকে দেখেছি আমি বাংলাদেশ; এই হাজা মজা ডোবা ও পুকুর এই সারি সারি গাছের দেয়াল, এই নদীর উত্তাল নৃত্য তোমাকে দেখেছি আমি বাংলাদেশ এক জন্মেরও বহু জন্ম আগে, চোখ মেলে তোমাকে দেখেছি দেশ, চক্ষু বুজেও তোমাকে দেখেছি তোমার মানচিত্র আমি ভূগোলের বইয়ে […]

ইতিহাস যদি ফের

ও কাকে দেখছি আমি বেরিয়েছে? পিঠে তার ব্যাগ, ব্যাগের ভেতরে রুটি, আতাফল, জরুরি ওষুধ হঠাৎ কামড়ায় যদি মন্দকাল শেয়ালের খ্যাঁক, ছিপিআঁটা কোমল পানীয় তার তেজালো বুদ্বুদ! সাইকেল? নাকি যাবে পায়ে হেঁটে? অথবা বেলুন! বাহন কী হবে তার অমাবস্যা অতিবাহনের? যাত্রাশেষে অন্নের ব্যঞ্জনে শুধু পাবে পোড়া নুন? এ কেমন কাল এলো এই দেশে এতটা ঘুমের? তাই […]

নিজের স্বদেশে

স্বদেশ তুমি ঝলসে যাওয়া গোলাপকুঁড়ি। সিঁড়ির কাছে ভরদুপুরে আমার ঘরে এগিয়ে এসো! দু চোখ জুড়ে কিসের দৃশ্য ভালবাস? স্বদেশ তুমি এক নদীর নারী_ রাতদুপুরে কিসের ঘোরে এমন তুমি তীক্ষষ্ট হাস? কাদের কাছে যেতে এখন ভালবাস! শহর জুড়ে ফুলের মড়া গন্ধ ছড়ায় শহর জুড়ে বসন্ত তার বাতাস বাড়ায় বক্ষ জুড়ে সেই বাতাসের বেয়াদবি বক্ষ জুড়ে সেই […]

মুক্তিবাহিনীর জন্যে

তোমার রাইফেল থেকে বেরিয়ে আসছে গোলাপ তোমার মেশিনগানের ম্যাগজিনে ৪৫টি গোলাপের কুঁড়ি তুমি ক্যামোফ্লেজ করলেই মরা ঝোপে ফোটে লাল ফুল বস্তুত দস্যুরা অস্ত্রকে নয় গোলাপকেই ভয় পায় বেশি তুমি পা রাখলেই অকস্মাৎ ধ্বংস হয় শত্রুর কংক্রিট বাংকার তুমি ট্রিগারে আঙুল রাখতেই মায়াবীর মতো জাদুবলে পতন হয় শত্রুর দুর্ভেদ্য ঘাঁটি ঢাকা নগরীর তোমার রাইফেল থেকে বেরিয়ে […]

তুমি বলেছিলে

দাউদাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। পুড়ছে দোকানপাট, কাঠ লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির দাউদাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘরবাড়ি। পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, মানচিত্র, পুরোনো দলিল। মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে সাধের আশ্রয়ত্যাগী হয় মৌমাছির ঝাঁক, তেমনি সবাই পালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্গি্বদিক। নবজাতককে বুকে নিয়ে উদভ্রান্ত জননী বন-পোড়া হরিণীর […]

যাদের বেলায় যা প্রযোজ্য

গ্রন্থকীটের কুটকখানি শুনে আমার পিত্তি জ্বলে। কবিই কবির সত্য-স্বজন; তাদের সাথে যুক্ত হয়েই মুক্তি খুঁজি মদ্যপানে। যদিও বই ওরাও কেনে তবুও আমার চিত্ত ঋণী অন্য কোথা, অন্য খানে। পা-িত্যের খ্যাতা পোড়াই আপন তালে তাল মিলিয়ে আমি নাচি আমার টানে। ‘অমরত্ব কবির ভৃত্য’ জেনেও প-িত যখন নৃত্য করেন আমি প্রাতঃকৃত্য সাঙ্গ করি। নাওজুবিল্লাহ, হরি-হরি ‘প্রাতঃকৃত্য’ শব্দ […]

প্রিয় রোকোনালী

স্ত্রীকে না বলিলে গুরুদ- হইবে ভাবিয়াই তাহাকে খুলিয়া বলিলাম, রোকোনালী আমার প্রিয় । স্ত্রী আমাকে নিশ্চুপ থাকিতে বলিয়া জানালা খুলিয়া দেখাইলেন, এবং বলিলেন, কার্জন হলের মাথার উপর চন্দ্র উঠিয়াছে, এবং কালো গাউন পরিহিত কিছু লোক এই দিকেই আসিতেছেন। তাকাইয়া দেখি, আমার প্রিয় মাতুল রোকোনালীও সঙ্গে আছেন তাহাদের। সকলেই আমার গৃহে প্রবেশ মাত্রই জানাইলেন, হালিম মিয়া, […]

বীর বীর

যা ভেবেছিলাম , হুবহু মিলে যাচ্ছে। আবর্তের মধ্যে ঘার আবর্ত একবার আমি ভুবনেশ্বরে , ধবলগিরিতে বুদ্ধের স্ট্যাচুতে রক্ত দেখে আঁতকে উঠেছিলাম, আমার শরীর হিম হয়ে যায়।চারদিকে মানুষের আনাগোনা, টুরিস্টের ভিড় , লক্ষ করি কারোর ভ্রুক্ষেপ নেই, যেন এসব নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আমার দিকে তথাগতর নিষ্পলক চোখ। ভয়ে কেঁপে উঠি। ঝাউগাছে ক্রন্দনমাখা বাতাস। অপরাধবোধে আমি নিজের পাঁজর […]