তুমি কাচ নও, তবু স্পর্শে ভয় পাই যদি ভেঙে যাও! যদি খুলে পড়ে টিপ, নাকফুল আঙুল থেকে গড়িয়ে পড়ে হীরের আংটি! ভয় হয় যদি ঠোঁট থেকে উড়ে যায় লিপজেল, অগোচরে পা থেকে খসে পড়ে সোনার নূপুর! ছুঁয়ে দেখা কিছু নয় তবু ভয় যদি গলে যাও মোম হয়ে! রাতভর ফোঁটা ফোঁটা মধু হয়ে ঝরে যাও! তুমি […]
একটি এলোমেলো প্রেমপত্র
এই বৈশাখ
অনিকেত শব্দরা ঘোরে মুখে মুখে এক কান থেকে আর এক কানে; ঝাপটায় ডানা পরিযায়ী হংসযূথ পড়ে মুখ থুবড়ে ফাঁদে আটকে; অভিভাবকহীন শব্দের মঞ্জুরি ঝরে টুপটাপ রাত-দিন সারাবেলা, নির্জন অরণ্যে বাজে কুঠারের শব্দ নিঃসঙ্গ আকাশে যায় উঠে যায় চৈত্রের হাওয়া পাতারা ওড়ে ঘরময় আনাচে-কানাচে কাননে আলো ছায়ায় নকশা ভাঙে সাদা কাগজে, আত্মতুষ্ট কালো অক্ষরের চাতক হা-মুখে […]
ক্ষুধা ও শিল্প
একাকী তদন্ত সেরে ফিরে এলো আমার কুকুর; বললো_ প্রভু, মানুষ আসলে ফুল পছন্দ করে না; তার চেয়ে রুটি ও সবজির গন্ধ ওরা বেশি ভালোবাসে! তবু ‘গোলাপ’ ‘গোলাপ’; বলে কান্না করা ওদের স্বভাব_ একজন গোলাপ সুন্দরী এক ঘণ্টাব্যাপী শুধু এই কথা আমাকে বোঝালো!
তুমি আগুন না জল
আমি তোমাকে ছুঁয়ে দেখলাম পাখির মতো যুগল ডানা আছে তোমার, তুমি কি উড়তে পারো? তোমার চোখ নয়, হাত বাড়াতেই মনে হলো হাত দুটো ডুবে গেলো গভীর দিঘিতে, হারমোনিয়ামের রিডের মতো ঠোঁটে আঙুল রাখতেই শুনতে পেলাম চুম্বনের মসৃণ শব্দ, চুম্বনের শব্দ এতো নরম হয় জানতাম না। নিঃশ্বাসের দোলনায় দুলে উঠলো আঙুল, বুঝলাম ওটা বুক, অথচ ছোঁয়ার […]
বৈশাখ! বৈশাখ!
এই আমার পহেলা বৈশাখ এভাবেই আমার ইতিহাস, এভাবেই আমি, বৈশাখের এই মাঠের মেলায়, গ্রামীণ গরীব এক সার্কাসের তাঁবুতে লম্বমান দড়ির পিঁড়িতে। উজ্জ্বল আলো, সঙ্গীতের ঝমঝম, টানটান ভাসমান আমি পরের দড়িটি লাফ দিয়ে ধরবার জন্যে দোল খাচ্ছি দোল খাচ্ছি, দর্শকের স্তম্ভিত নিঃশ্বাস, কিন্তু দৃষ্টি নেই তাদের ওপরে, তারা কিছু নয়! দড়িটিই কেবল আমার চেতনায়_ এভাবেই আমার […]
আপন আলোয়
তিন শত পঁয়ষট্টি প্রদীপের নিচে ছিল খুব কিমাকার আঁধার— অনিবার্য আঁধারেরই প্রতিপত্তি ছিল পুরো পরিসরজুড়ে!—জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতা ছাড়া বাকি তিন ভাগ জলে বৈদেশে বিরানে অবসিত। —তবু কি সোয়াস্তি আছে? অস্বস্তিও সঙ্গে সঙ্গে গেছে! এমন সুন্দর পটে কল্পনায়ও আলোর অভাব থাকার কথা তো নয়—তবু ছিল, এ-ও বাস্তবতা; ‘মাৎস্যন্যায়’ কাকে বলে তুমি কি তা জানোনি অতীতে? বিস্মৃতিপ্রবণ যদি, […]
প্রেমেই বৃদ্ধি পরমায়ু
লোকে কয়— প্রেমেই নাকি বৃদ্ধি হয় পরমায়ু স্নায়ুর ভেতর খেলতে থাকে নানান তৃষ্ণা কেউবা শ্যামল কেউবা শাদা কেউবা কৃষ্ণা— তবু প্রেমের নাই বিতৃষ্ণা। বাছাই করতে পারলে তবে ধরতে যেন ইচ্ছে হবে, ছুঁয়ে দেখতে মনটা ব্যাকুল, পরাণ কাঁপে— হাঁটতে গেলে ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দেখি, আরে আরে আমি তবে করছি একি! এ কভু নয় আমার লজ্জা-শরম ও […]
তুমি আজও তুমি
সে কী বিস্ময়! সেই বসন্ত! কী করে ভুলি? অমাবস্যার রাত নাকি সেটা দীর্ঘ চুলই পরণকথার কোনো রূপসীর! আজকাল কারও দেখি না তো চুল দীর্ঘ এতটা— বিস্ময় সে কী! আর সেই চুলে তারার ফোঁটা— কত লক্ষ তা? এক লক্ষই হবে— দাবানল লাগা বনের শিখায় ওড়ে এক কোটি অগ্নিকণা— আমি ভুলব না সে উন্মাদনা! বিস্ময়ে হই এমন […]
আরো একজন
যেখানেই যাও তুমি, যেখানেই যাও সঙ্গে যায় আরো একজন; যদিও অদূরে তবু তার দূরত্ব ভীষণ। যেখানেই দৃষ্টি দাও, যেখানেই দাও দৃষ্টি দেয় আরো একজন; যদিও সুনীল তবু সেখানেই মেঘের গড়ন। যাকেই যে কথা বলো, যাকেই যে কথা শুনে যায় আরো একজন; যদিও নিশ্চুপ তবু অবিরাম পদ্মার ভাঙন। যেখানেই রাখো হাত, যেখানেই রাখো রাখে হাত আরো […]
ফিরে পেতে চাই
দেশহীন মানুষের আর্তি আমি প্রিয় বন্ধু আজিজের কণ্ঠে শুনে মোহ্যমান— জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক দপ্তরের দায়িত্বে ছিল সে; সংবেদনশীল বন্ধু আজিজের আর্দ্রকণ্ঠ আজও আমি শুনতে পাই— ‘একজন মানুষের দেশ থাকতে হয়;’ আনপড় এই আমিও বুঝতে পারি—‘দেশ’ কতটা দরকার, একজন মানুষের! প্রণম্যা আমার, আমি চাই পিতার স্বপ্নের দেশ— আমার জীবদ্দশায় সেই বাঙলাটি আমি চাই; চর্যাপদের বাঙলা, চণ্ডীদাসের বাঙলা, […]