মাটির হাতে

এ কোন্ যন্ত্রণা দিবসে, আর এ কোন্ যন্ত্রণা রাতে; আকাশী স্বপ্ন সে ছুঁয়েছে তার মাটিতে গড়া দুই হাতে। বোঝেনি, রাত্রির ঝোড়ো হাওয়ায় যখন চলে মাতামাতি, জ্বলতে নেই কোনো আকাঙ্ক্ষায় জ্বালাতে নেই মোমবাতি। ভেবেছে, সবখানে খোলা দুয়ার দ্যাখেনি দেয়ালের লেখা; এবং বোঝেনি যে বারান্দার ধারেই তার সীমারেখা। তবু সে গিয়েছিল বারান্দায়, কাঁপেনি তবু তার বুক; তবু […]

ভয়

যদি এ চোখের জ্যোতি নিবে যায় তবে কি হবে, কী হবে! দূরপথে ঘুরে ঘুরে ঢের নদীবন খুঁজে যাকে এই রাতে নিয়ে এলে মন এখনো দেখিনি তাকে দেখিনি, এখন যদি এ চোখের জ্যোতি নিবে যায় তবে কি হবে, কী হবে! সে-ও চলে যেতে পারে, যদি যায় তবে কি হবে, কী হবে! এই যে চোখের আলো, ব্যথাবেদনার […]

বাতাসি

“বাতাসি ! বাতাসি !”—লোকটা ভয়ংকর চেঁচাতে চেঁচাতে গুমটির পিছন দিকে ছুটে গেল । ধাবিত ট্রেনের থেকে এই দৃশ্য চকিতে দেখলুম । কে বাতাসি ? জোয়ান লোকটা অত ভয়ংকরভাবে তাকে ডাকে কেন ? কেন হাওয়ার ভিতরে বাবরি-চুল উড়িয়ে পাগলের মতো “বাতাসি ! বাতাসি !” ব’লে ছুটে যায় ? টুকরো টুকরো কথাগুলি ইদানিং যেন বড় বেশি— গোঁয়ার […]

দৃশ্যের বাহিরে

সিতাংশু, আমাকে তুই যতো কিছু বলতে চাস, বল। যতো কথা বলতে চাস, বল। অথবা একটাও কথা বলিসনে, তুই বলতে দে আমাকে তোর কথা। সিতাংশু, আমি যে তোর সমস্ত কথাই জেনে গেছি। আমি জেনে গেছি। কী বলবি আমাকে তুই, সিতাংশু ? বলবি যে, ঘরের ভিতরে তোর শান্তি নেই, তোর শান্তি নেই, তোর ঘরের ভিতরে বড়ো অন্ধকার, […]

দিঘির ভিতরে ছায়া

দিঘির ভিতরে ছায়া ধীরে বড় হয়, ধীরে-ধীরে নিজেকে গুটিয়ে আনে ফের । মাঝে মাঝে হাওয়া দেয় । জালের শরীরে দোলা লাগে । ত্রিকালে দণ্ডায়মান বৃদ্ধ অশথের শাখা-প্রশাখায় ছড়ায় অস্ফুট কানাকানি । তীব্র নীল আকাশে নিঃসঙ্গ চিল উড়ে চলে যায় । জলের উপরে ভাসে অশথের শান্ত ছায়াখানি । আজও ছায়াখানি সেই জলের উপর শুয়ে আছে । […]

এশিয়া

এখন অস্ফুট আলো । ফিকে ফিকে ছাড়া অন্ধকারে অরণ্য সমুদ্র হ্রদ, রাত্রির শিশির-শিক্ত মাঠ অস্থির আগ্রহে কাঁপে, আসে দিন, কঠিন কপাট ভেঙে পড়ে । দুর্বিনীত দুরন্ত আদেশ শুনে কারো দীর্ঘরাত্রি মরে যায়, ধসে পড়ে শীর্ণ রাজ্যপাট ; নির্ভয়ে জনতা হাঁটে আলোর বলিষ্ঠ অভিসারে । হে এশিয়া, রাত্রিশেষ, “ভস্ম অপমান শয্যা” ছাড়, উজ্জীবিত হও রূঢ় অসংকোচ […]

উলঙ্গ রাজা

সবাই দেখছে যে, রাজা উলঙ্গ, তবুও সবাই হাততালি দিচ্ছে। সবাই চেঁচিয়ে বলছে; শাবাশ, শাবাশ! কারও মনে সংস্কার, কারও ভয়; কেউ-বা নিজের বুদ্ধি অন্য মানুষের কাছে বন্ধক দিয়েছে; কেউ-বা পরান্নভোজী, কেউ কৃপাপ্রার্থী, উমেদার, প্রবঞ্চক; কেউ ভাবছে, রাজবস্ত্র সত্যিই অতীব সূক্ষ্ম , চোখে পড়ছে না যদিও, তবু আছে, অন্তত থাকাটা কিছু অসম্ভব নয়। গল্পটা সবাই জানে। কিন্তু […]

অমলকান্তি

অমলকান্তি আমার বন্ধু, ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম। রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না, শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে, দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের। আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল। অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি। সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল! ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর, […]

বিদ্রোহী

বল বীর – বল উন্নত মম শির! শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির! বল বীর – বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’ চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’ ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর! মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর! বল বীর – আমি চির উন্নত শির! আমি চিরদূর্দম, […]

ফরিয়াদ

এই ধরণীর ধূলি-মাখা তব অসহায় সন্তান মাগে প্রতিকার, উত্তর দাও, আদি-পিতা ভগবান!- আমার আঁখির দুখ-দীপ নিয়া বেড়াই তোমার সৃষ্টি ব্যাপিয়া, যতটুকু হেরি বিস্ময়ে মরি, ভ’রে ওঠে সারা প্রাণ! এত ভালো তুমি? এত ভালোবাসা? এত তুমি মহীয়ান্‌? ভগবান! ভগবান! তোমার সৃষ্টি কত সুন্দর, কত সে মহৎ, পিতা! সৃষ্টি-শিয়রে ব’সে কাঁদ তবু জননীর মতো ভীতা! নাহি সোয়াসি-, […]