কোথায় – হাফিজ

অনুবাদ: সুভাষ মুখোপাধ্যায় ওদিকে রয়েছে পুণ্যকর্ম এদিকে রয়েছি আমি দুরাচার ; চেয়ে দেখ, এই দুয়ের মধ্যে রচে ব্যবধান অকূলপাথার । মঠমন্দির নামাবলীভেখ ওতে মন নেই, ছেড়েছি ওসব; কোথা কোণার্ক, কোথা সদগুরু কোথায় মিলবে শুদ্ধ আসব ? সংযম আর সৎকর্মের সঙ্গে কী যোগ মধ্যপানের ? উপদেশ-কথামৃতের সঙ্গে আওয়াজে কী মিল থাকবে গানের ? চোখে যদি ভাসে […]

কেডা রে

বাড়ি| গাড়ি| অঢেল টাকা | প্রাচুর্য আজ দিয়েছে ঢাকা | সাবেকের সেই দৈন্য | স্বয়ং যেতে হয় না জেলে | ফেললে কড়ি বাজারে মেলে লড়াই করার সৈন্য | দল পাকিয়ে ছেলেবুড়োয় গাছের খায়, তলার কুড়োয় | ওদের মাফপ সাতখুন | বেঁচে থাকুক সর্বহারা | যমের বাড়ি পাঠাও, যারা জোঁকের মুখে দেয় নুন |

কুমারসম্ভব

পেছনের সব টান যাক চুকে বুকে | বন্ধ কর হাপু-গান সারা পিঠ ঘা করছে নিজেরই চাবুকে | এখন পড়ন্ত বেলা ছায়াই শুধু পিছু হাঁটে শেষ করো খেলা সামনে যখন সব মাঠে সগৌরবে ছুটেছে রণপায় লাঠি হাতে কি তুমি দৌড়োবে এখুনি কালের এক ফুঁয়ে নিবে তো যাবেই, তার আগেই বাপু, হে স্বয়ং সূর্যের কাছ থেকে অল্পস্বল্প […]

এখন ভাবনা

১ এখন একটু চোখে চোখে রাখো – দিনগুলো ভারি দামালো ; দেখো, যেন আমাদরে অসাবধানে এই দামালো দিনগুলো গড়াতে গড়াতে গড়াতে গড়াতে আগুনের মধ্যে না পড়ে। আমার ভালোবাসাগুলোকে নিয়েই আমার ভাবনা। এখন সেই বয়স, যখন দূরেরটা বিলক্ষণ স্পষ্ট – শুধু কাছেরটাই ঝাপ্ সা দেখায়। এখন সেই বয়স, যখন আচম্ কা মাটিতে প’ড়ে যেতে যেতে মনে […]

একটু পা চালিয়ে, ভাই – ৪

লেনিনকে আমরা দাঁড় করিয়ে রেখেছি ধর্মতলায় ট্রামের গুমটির পাশে। আঁস্তাকুড়ের ভাত একদল খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে ডাস্টবিনে হাত চালিয়ে দিয়ে। লেনিন দেখছেন। গ্রামের এক লোক শহরে ডাক্তার দেখিয়ে সর্বস্বান্ত হতে এসেছিল তার আগেই তাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়ে গেল এক পকেটমার। লেনিন দেখছেন। সন্ধের মুখে যে মেয়েটাকে একটা ট্যাক্সি এসে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, সন্ধে গড়িয়ে গেলে, হাই […]

আলালের ঘরের দুলাল

বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে পায়ে শিকল দিয়ে কোকিল মরছে কেশে কেশে এ গাঁয়েতে বান তো ও গাঁয়েতে খরা যে করে হোক আখেরে ভোট ভাতের টোপে ধরা নীচেয় থাকে হাবা বোবা ওপরতলায় কালা কাজের জন্যে মানুষ হন্যে দরজাগুলোয় তালা এই এটাকে চেয়ারে বসা ওই ওটাকে হটা সামনে পুলুশ পিছনে জুলুশ তবে না ঘটাপটা খুনখারাবি […]

আমি জেলে যাবার পর

মুল কবিতা – নাজিম হিকমত অনুবাদ : সুভাষ মুখোপাধ্যায় জেলে এলাম সেই কবে তার পর গুণে গুণে দশ-বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী। পৃথিবীকে যদি বলো, বলবে – ‘কিছুই নয়, অণুমাত্র কাল।’ আমি বলব – ‘না , আমার জীবনের দশটা বছর।’ যে বছর জেলে এলাম একটা পেন্সিল ছিল লিখে লিখে ক্ষইয়ে ফেলতে এক হাপ্তাও লাগেনি। পেন্সিলকে […]

মে-দিনের কবিতা

প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা, চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া। চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ, গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে, তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য জীবনকে চায় ভালবাসতে। প্রণয়ের যৌতুক দাও প্রতিবন্ধে, মারণের পণ নখদন্তে; বন্ধন ঘুচে যাবে জাগবার ছন্দে, উজ্জ্বল দিন দিক্‌-অন্তে। শতাব্দীলাঞ্ছিত আর্তের কান্না প্রতি […]

হঠাৎ শূণ্যের দিকে

ক্রমে স্পষ্ট হয় সব । কে সিংহ, কুকুর, হাতি, সার্কাসের ঘোড়া ; কে টিয়া, চন্দনা, কংবা হাঙর কুমির ; বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে এসে কলকাতার ভীড় ঠেলে কে সাঁতার কাটে ; কে ধর্মতলায় পাঞ্জাবির হাতা নেড়ে উড়ে যেতে চায় হঠাত্ আকাশে । যেন একে একে সবগুলি অভ্যাসের ফোড়া ফেটে গেলে ঠিক বিকেলে তিন পা হেঁটে চিনে […]

সহোদরা

না, সে নয় । অন্য কেউ এসেছিল । ঘুমো তুই ঘুমো । এখনো রয়েছে রাত্রি, রোদ্দুরে চুমো লাগেনি শিশিরে । ওরে বোকা, আকাশে ফোটেনি আলো, দরজায় এখনো তার টোকা পড়েনি । টগর-বেলা-গন্ধরাজ-জুঁই সবাই ঘুমিয়ে আছে, তুই জাগিসনে আর । তোর বরণডালার মালাগাছি দে আমাকে, আমি জেগে আছি । না রে মেয়ে, নারে বোকা মেয়ে, আমি […]