রঙীন রুমালে চোখ দুটো বাঁধা নিজের সঙ্গে নিজের অষ্টপ্রহর- কানামাছি খেলা ভারী চমৎকার ধাঁধা। যাকে ছোঁবার তাকে না ছুঁয়ে আকাশ ধরতে হাত বাড়িয়ে আমি ধুলো মাটির ভূয়ে। হাত বাড়ালে হাতে জলের বদলে শামুক অথচ ভেতরটা পরাগসুদ্ধ ফুলের জন্যে আপাদমস্তক কামুক। সিদুর রঙের কিছু দেখলেই মন উসখুস, ইচ্ছেয় আগুন বিশ্বাসের বাকলে সত্যিই এল ফাল্গুন? কাছে যাই, […]
পাওয়া না-পাওয়ার কানামাছি
যে যায় সে দীর্ঘ যায়
একজন দীর্ঘ লোক সামনে থেকে চলে গেলো দূরে — দিগন্তের দিকে মুখ, পিছনে প্রসিদ্ধ বটচ্ছায়া কে জানে কোথায় যাবে— কোথা থেকে এসেছে দৈবাৎ-ই এসেছে বলেই গেলো, না এলে যেতো না দূরে আজ। সমস্ত মানুষ, শুধু আসে বলে, যেতে চায় ফিরে। মানুষের মধ্যে আলো, মানুষেরই ভূমধ্য তিমিরে লুকোতে চেয়েছে বলে আরো দীপ্যমান হয়ে ওঠে — আশা […]
পরানের গহীন ভিতর ৩১
কে করে পরশ তার জীবনের এত জটিলতা? তোমার অধিক টান দেয় বৃক্ষ দেয় বিষলতা; একবার আমারে আছাড় দিয়া সোজা করে ফের, আমারই মতন যারা বেশুমার সন্তান মায়ের। কিসে যে চালনা করে এই দেহ এই ভবিষ্যৎ- কিছুই বুঝি না, দেখি আচানক শেষ হয় পথ; যে পথেই মেলা দেই সেই পথে ভয়ানক ভুত- এ বড় কঠিন জাগা, […]
গোধূলির গান
জানি না ক্লান্তির আর্তি ছাড়া অন্য কোনো ধ্বনি ছিল কি না সন্ধ্যার নদীর স্বরে কে যেন মন্ত্রের মতো উচ্চারণ করে কবেকার ভুলে যাওয়া নাম। দেবতার মতো তবু মন্ত্র ছড়ায় প্রাচীন দেবদারুগাছ! একবার ফিরে যাই, ফিরে আসি বধ্যভূমিতে আবার আমার বিপন্ন সংগীত মাড়িয়ে মাড়িয়ে হন্তারকেরা নিরাপদে হেঁটে যায়। এবং হঠাৎ একটি অচেনা পাখি দ্যুলোক-ভূলোকজুড়ে বারবার রটিয়ে […]
তুমি এখন ছবি মাগো
হারায় দিন, হারায় ক্ষণ একটু একটু করে বিস্মৃতিতে হারায় নতুন প্রতিটি ভোর! বিমর্ষতায় ছেয়ে থাকা চোখ হণ্যে হয়ে খুঁজে সুখ ঘোর লাগা দৃষ্টি সুখ কখনো না-হারানো সুখ ! তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার এ সুখ- হরষে, পরশে, বরষে হৃদয় অ মাঝে- তুমি এখন ছবি হয়ে গেছ মা! এখানে বোধেরা সব পড়ে রয় অবোধ মৃতবৎ । মনে পড়ে, তোমার […]
‘তনু’ ও ‘তনু’ রে
হায় রে তনু— আমাদের আজিকার তনুমন তাপে, অনুতাপে, ক্ষত ও ক্ষরণ, দহন, জ্বলন, জলাঞ্জলির দীপাবলিতে– চমৎকার স্থবির, শুনশান সব। জঠর, জরায়ু, বক্ষ ও মগজভেদী আর্তনাদে দেওলিয়া প্রান্তর- প্রান্তরেখার খন্ডিত চরাচর! মানুষ তো নয়, চারপাশে নির্ঘাত কীটপতঙ্গ শব! আছি অপেক্ষায়- আরো একবার, বারবার, সহস্রবার পিষ্ট হবার। তুমি, বরং ঘুমাও তনু পত্র পল্লবের শ্যামল ছায়ায় লুটাইয়া দেহখানি, […]
তোমাকে চেনে?
ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট ডিনার খাচ্ছ রোজ। সে তোমাকে চেনে? যে খাট-পালঙ্গে শুয়ে স্বপ্নে তুমি চাঁদ সদাগর সে তোমাকে চেনে? যে আয়নাকে শরীরের সব তিল, সর্বস্ব দেখালে সে তোমাকে চেনে? যেন মেয়ে-দেখা, এত বেছে ঐ পর্দা কিনেছিলে ও তোমাকে চেনে? এই কালো টেলিফোন, ওয়ার্ডরোব, লং প্লেয়িং, টিভি এই সব থাক্-থাক্ বই, সোফা, নেপালী মুখোশ কে […]
স্নান করে উঠে কতক্ষণ
স্নান করে উঠে কতক্ষণ ঘাটে বসে আছে এক উন্মাদ মহিলা মন্দিরের পিছনে পুরনো বটগাছ। ঝুরি। ফাটধরা রোয়াকে কুকুর। অনেক বছর আগে রথের বিকেলে নৌকো থেকে ঝাঁপ দিয়ে আর ওঠেনি যে-দস্যি ছেলেটা এতক্ষণে, জল থেকে সে ওঠে, দৌড় মারে, ঝুরি ধরে খুব দোল খায় সারা গা শ্যাওলায় ভরা, একটা চোখ মাছে খেয়ে গেছে কেউ তাকে দেখতে […]
যখন নেই, তখন থাকো
যখন আমার সঙ্গে নেই তুমি, আমার সঙ্গে তুমি তখন সবচেয়ে বেশি থাকো। আমি হাঁটি, পাশাপাশি মনে হয় তুমিও হাঁটছো, তোমাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে যাই, যা যা খেতে পছন্দ করো, কিনি, তুমি নেই জেনেও কিনি। রাঁধি যখন, দরজায় যেন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো, মনে মনে কথা বলি। খেতে বসি, ভাবি তুমিও বসেছো। যা কিছুই দেখি, পাশে […]
হাসপাতালে লেখা
আবার এখানে এসে বসা গেলো তবে, এই জল নীলের নিকটে ফের বহুদিন পরে, এখনো এখানে রোদ সেদিনের উজ্জ্বল বৈভবে আমাকে করালো স্নান, আরো কিছু ঘটে তার পরে। একটি বালিকা এসে হাত পেতে দাঁড়ায় সে আজও, ভিক্ষা চায়, বুকের ওড়না থেকে বকুলের ফুল, তবে বাঁশি সেদিনের ইমনের সুরে তবে বাজো, যেন ভেসে যেতে থাকে পৃথিবীর একূল […]