ধান

হলুদ শাড়ি আর পরো না, এবার মাঠে হলুদ ধান ফলেনি ঘরে তোমার হল্‌দে পর্দা! মিনতি করি খুলে রাখো এবার মাঠে হলুদ ধান ফলেনি। এপাড়া জুড়ে সানাই বাজে, ওপাড়া জুড়ে শামিয়ানা ব্যস্ত মানুষ, সুখী মানুষ, শঙ্খ আর উদ্ধ্বনি লাল চেলি সবই থাকুক, বন্ধ রাখো গায়ে-হলুদ এবার মাঠে হলুদ ধান ফলেনি আয় কাক আয় কাকের পাল আয়রে […]

দ্বারভাঙা জেলার রমণী

হাওড়া ব্রীজের রেলিং ধরে একটু ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিল দ্বারভাঙা জেলা থেকে আসা টাট্‌কা রমনী ব্রীজের অনেক নিচে জল, সেখানে কোনো ছায়া পড়ে না কিন্তু বিশাল এক ভগবতী কুয়াশা কলকাতার উপদ্রুত অঞ্চল থেকে গড়িয়ে এসে সভ্যতার ভূমধ্য অরিন্দে এসে দাঁড়ালো সমস্ত আকাশ থেকে খসে পড়লো ইতিহাসের পাপমোচানবারী বিষণ্ণতা ক্রমে সব দৃশ্য, পথ ও মানুষ মুছে যায়, কেন্দ্রবিন্দুতে […]

দুটি অভিশাপ

সমুদ্রের জলে আমি থুতু ফেলেছিলাম কেউ দেখেনি, কেউ টের পায়নি প্রবল ঢেউ-এর মাথায় ফেনার মধ্যে মিশে গিয়েছিল আমার থুতু তবু আমার লজ্জা হয়, এতদিন পর আমি শুনতে পাই সমুদ্রের অভিশাপ। মেল ট্রেনের গায়ে আমি খড়ি দিয়ে এঁকেছিলাম নারীর মুখ কেউ দেখেনি, কেউ টের পায়নি এমনকি, সেই নারীরও চোখের তারা আঁকা ছিল না এক স্টেশন পার […]

ডাকবাংলোতে

ফুটে উঠলো একটি দুটি টগর কন্ঠে মুক্তো- মালা মরি মরি তোমরা আজ সকালবেলার প্রসণ্নতা এক মুহূর্তে শিশির ভেজা আলো নর্মছলে তোমরা অন্সীরী। ‘কী সুন্দর ঐ টগর ফুল দুটো- খোঁপায় গুঁজবো আমি!’ প্রাক-যুবতী বারান্দার প্রান্তে এসে আঁখি তুললো- সদ্য ভোর, বিরল হওয়া, ঠান্ডা রোদ সাংকেতিক পাখির ডাক, উপত্যকায় নির্জনতা আমি বেতের ইজিচেয়ারে অলস। ফুলের থেকে চোখ […]

জয়ী নই, পরাজিত নই

পাহাড়-চুড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল আমি এই পৃথিবীকে পদতলে রেখেছি এই আক্ষরিক সত্যের কছে যুক্তি মূর্ছা যায়। শিহরিত নির্জনতার মধ্যে বুক টন্‌‌টন করে ওঠে হাল্‌কা মেঘের উপচ্ছায়ায় একটি ম্লান দিন সবুজকে ধূসর হতে ডাকে আ-দিগন্ত প্রান্তের ও টুকরো ছড়ানো টিরার উপর দিয়ে ভেসে যায় অনৈতিহাসিক হাওয়া অরণ্য আনে না কোনো কস্তুরীর ঘ্রাণ কিছু নিচে ছুটন্ত মহিলার […]

জীবন ও জীবনের মর্ম

জীবন ও জীবনের মর্ম মুখোমুখি দাঁড়ালে আমি ভুল বুঝতে পারি আমার ক্ষামা চাইতে ইচ্ছে হয়। বুদ্ধের বুকের হাঁস হানা ঝাপটায়, আমি মাংসলোভী বিশাল বৃক্ষের ছায়া জলে ভাসে-আমি তমস্বান হয়ে ছুটে গেছি আমি ভুল বুঝতে পারি- বিস্মৃতিকে কতবার মনে ভেবেছি বিষন্নতা ট্রেন লাইনের পশে এসে থমকে দাঁড়িয়েছে বনবাসী হরিণ কয়লা খনির ভিতরের অপরাহ্নের মতন উদসীনতা আমাকে […]

জলের সামনে

ব্রিজের অনেক নিচে জল, আজ সেইখানে ঝুঁকেছে মানুষ কখনো মানুষ হয়ে উঠি আমি, কখনো মানুষ নই, তবুও সন্ধ্যায় ব্রিজের খিলান ধরে ঝুঁকে থেকে মনে হয় অবিকল মানুষেরই মতো মানুষের জল দেখা, জলের মানুষ দেখা পরস্পর মুখ; মানুষ দেখেছে জল বহুদিন মানুষ দেখেছে অশ্রজল মানুষ দেখেছে মুখ অশ্রুভেজা ব্রিজের অনেক নিচে হিম কালো জলে কালো জল […]

ছায়ার জন্য

গাছের ছায়ায় বসে বহুদিন, কাটিয়েছি কোনোদিন ধন্যবাদ দিইনি বৃক্ষকে এখন একটা কোনো প্রতিনিধি বৃক্ষ চাই যাঁর কাছে সব কৃতজ্ঞতা সমীপেষু করা যায়। ভেবেছি অরণ্যে যাব-সমগ্র সমাজ থেকে প্রতিভূ বৃক্ষকে খুঁজে নিতে সেখানে সমস্তক্ষণ ছায়া সেখানে ছায়ার জন্য কৃতজ্ঞতা নেই সেখানে রক্তিম আলো নির্জনতা ভেদ করে খুঁজে নেয় পথ মুহূর্তে আড়াল থেকে ছুঠে আসে কপিশ হিংস্রতা […]

চিনতে পারোনি?

যে-কোনো রাস্তায় যে-কোনো লোককে ডেকে বলো, তুমি আমার বাল্যকালের খেলার সঙ্গী, মনে পড়ে না? কেন তোমার ব্যস্ত ভঙ্গি? কেন আমায় এড়িয়ে যাবার চঞ্চলতা! আমার অনেক কথা ছিল, তোমার জামার বোতাম ঘিরে অনেক কথা এই মুখ, এই ভূরুর পাশে চোরা চাহনি, চিনতে পারেনি? যে-কোনো রাস্তায় যে-কোনো লোককে ডেকে বলো, আমি তোমার বল্যকালের খেলার সঙ্গী মনে পড়ে […]

গহন অরণ্যে

গহন অরণ্যে আর বারবার একা যেতে সাধ হয় না- শুকনো পাতার ভাঙা নিশ্বাসের মতো শব্দ তলতা বাঁশের ছায়া, শালের বল্লরী, সরু পথ কালভার্টে, টিলার জঙ্গলে একা বসে থাকা কী-করম নিঝুম বিষন্ন বড় হিংস্র দুঃখময়। অসংখ্য আত্মার মতো লুকোনো পাখী ও প্রাণী, অপার্থিব নির্জনতা ফুলের সুবর্ণরেখা গন্ধ, সামনে ঢেউ উৎরাই- অসহিষ্ণু জুতোর ভিতরে বালি, শিরদাঁড়া ব্যথা […]