বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে ভোরের দোয়েলপাখি — চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ জাম — বট — কাঠালের — হিজলের — অশখের করে আছে চুপ; ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে; মধুকর ডিঙা […]

আকাশলীনা

সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনা : নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে; ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে; ফিরে এসো হৃদয়ে আমার; দূর থেকে দূরে – আরও দূরে যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর। কী কথা তাহার সাথে? – তার সাথে! আকাশের আড়ালে আকাশে মৃত্তিকার মতো তুমি আজ : তার প্রেম […]

বনলতা সেন

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে; আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন । চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের […]

নাবিক

কবে তব হৃদয়ের নদী বরি নিল অসম্বৃত সুনীল জলধি! সাগর-শকুন্ত-সম উল্লাসের রবে দূর সিন্ধু-ঝটিকার নভে বাজিয়া উঠিল তব দুরন্ত যৌবন! পৃথ্বীর বেলায় বসি কেঁদে মরে আমাদের শৃঙ্খলিত মন! কারাগার-মর্মরের তলে নিরাশ্রয় বন্দিদের খেদ-কোলাহলে ভ’রে যায় বসুধার আহত আকাশ! অবনত শিরে মোরা ফিরিতেছি ঘৃণ্য বিধিবিধানের দাস! -সহস্রের অঙুলিতর্জন নিত্য সহিতেছি মোরা-বারিধির বিপ্লব-গর্জন বরিয়া লয়েছ তুমি, তারে […]

বনের চাতক-মনের চাতক

বনের চাতক বাঁধল বাসা মেঘের কিনারায়- মনের চাতক হারিয়ে গেল দূরের দুরাশায়! ফুঁপিয়ে ওঠে কাতর আকাশ সেই হতাশার ক্ষোভে- সে কোন্ বোঁটের ফুলের ঠোঁটের মিঠা মদের লোভে বনের চাতক-মনের চাতক কাঁদছে অবেলায়! পুবের হাওয়ায় হাপর জ্বলে, আগুনদানা ফাটে! কোন্ ডাকিনীর বুকের চিতায় পচিম আকাশ টাটে! বাদল-বৌয়ের চুমার মৌয়ের সোয়াদ চেয়ে চেয়ে বনের চাতক-মনের চাতক চলছে […]

বেদিয়া

চুলিচালা সব ফেলেছে সে ভেঙে, পিঞ্জরহারা পাখি! পিছুডাকে কভু আসে না ফিরিয়া, কে তারে আনিবে ডাকি? উদাস উধাও হাওয়ার মতন চকিতে যায় সে উড়ে, গলাটি তাহার সেধেছে অবাধ নদী-ঝর্ণার সুরে; নয় সে বান্দা রংমহলের, মোতিমহলের বাঁদী, ঝোড়ো হাওয়া সে যে, গৃহপ্রাঙ্গণে কে তারে রাখিবে বাঁধি! কোন্ সুদূরের বেনামী পথের নিশানা নেছে সে চিনে, ব্যর্থ ব্যথিত […]

অস্তচাঁদে

ভালোবাসিয়াছি আমি অস্তচাঁদ, -ক্লান্ত শেষপ্রহরের শশী! -অঘোর ঘুমের ঘোরে ঢলে যবে কালো নদী-ঢেউয়ের কলসী, নিঝ্ঝুম বিছানার পরে মেঘবৌ’র খোঁপাখসা জোছনাফুল চুপে চুপে ঝরে,- চেয়ে থাকি চোখ তুলে’-যেন মোর পলাতকা প্রিয়া মেঘের ঘোমটা তুলে’ প্রেত-চাঁদে সচকিতে ওঠে শিহরিয়া! সে যেন দেখেছে মোরে জন্মে জন্মে ফিরে’ ফিরে’ ফিরে’ মাঠে ঘাটে একা একা, -বুনোহাঁস-জোনাকির ভিড়ে! দুশ্চর দেউলে কোন্-কোন্ […]

স্মৃতি

থমথমে রাত, আমার পাশে বসল অতিথি- বললে, আমি অতীত ক্ষুধা-তোমার অতীত স্মৃতি! -যে দিনগুলো সাঙ্গ হল ঝড়বাদলের জলে, শুষে গেল মেরুর হিমে, মরুর অনলে, ছায়ার মতো মিশেছিলাম আমি তাদের সনে; তারা কোথায়?-বন্দি স্মৃতিই কাঁদছে তোমার মনে! কাঁদছে তোমার মনের খাকে, চাপা ছাইয়ের তলে, কাঁদছে তোমার স্যাঁত্সেঁতে শ্বাস-ভিজা চোখের জলে, কাঁদছে তোমার মূক মমতার রিক্ত পাথার […]

সে

আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে; বলেছিলোঃ ‘এ নদীর জল তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল; সব ক্লান্তি রক্তের থেকে স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি; এই নদী তুমি।’ ‘এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?’ মাছরাঙাদের বললাম; গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম। আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি; জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে। সময়ের অবিরল শাদা আর কালো বনানীর বুক থেকে […]

আট বছর আগের এক দিন

শোনা গেল লাশকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে; কাল রাতে – ফাল্গুনের রাতের আধাঁরে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ মরিবার হল তার সাধ। বধূ শুয়ে ছিল পাশে – শিশুটিও ছিল; প্রেম ছিল,আশা ছিল-জোৎসনায়,-তবে সে দেখিল কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার? অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল – লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার। এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি! […]