কাজী নাসির মামুন-এর একগুচ্ছ কবিতা………

 ছোবল

এই যে মনুষ্যকুল অনেক চিন্ময় শেয়ালের মতো মাটি খোঁড়ে বানায় আপন করে সমাধি
ফলক, মান্য করে জ্ঞান মৃত্যু প্রেম নির্মোক অথবা যুদ্ধ–থরো থরো বিভিন্ন চিত্তের প্রহসন
আর ছেঁড়া কাগজের মতো বিচ্ছিন্ন প্রভুকে চরম উদ্বেগসহ জীবনের; ললিত বেশ্যার মতো
জীবন বিকিয়ে দেয় তত্ত্বে যাজক ঠাকুর আর পীরের আস্থায়;
নাগা পাহাড়ের শীর্ষে উঠে
আমি তার পতন চরিতার্থতা হাতের মুঠোয় নিয়ে জেনেছি, আমরা
সবাই অধীর শূন্যে পরাভুত;
গোলাপ জামের কালো নিয়ে
রস রস খেলি ।
কেবল রচনা করি নিজের ছোবল ।

উপাসনা

বিনীত আমিও বলি, দাও সর্পসংহারের আকুল মন্ত্রণা; বুকভরা সব নিহিত কাঁটার উপশম ।
বৃক্ষের সুশান্ত মনোবীজ নিজের ভেতর নিয়ে দেখলাম, সেখানেও রয়েছে কোটর ; ছায়া শুধু
নয়, দুর্লভ শঙ্কার হাতছানি । কখনো হরিৎ পাতা একটি বিছার জন্য খাদ্য সমরূপ ;  আলো
দেখলে পতঙ্গ মৃত্যু মনে পড়ে । তাহলে কোটর,  আলো, পাতা  আসলে দংশন ? কুণ্ডলিত
ফণার বিহিত ? ছোবল-শস্যের কাছে চিরদিন মাথা নত মানুষের ?

অমোঘ ওঝার মতো আমি শুধু বশ-করা একটি রাত্রিকে কামনা করেছি রোজ নির্মেদ সময়ে
জার জার প্রার্থনায় ।  ও স্বাতী নক্ষত্র,  সৌর বৃষ্টিকে তাহলে বলো  আমাকে ভিজাক  লাল
বেদেনীর মতো—যে আমাকে শেখাবে কুহক, রক্তখঞ্জরের মতো ঢুকে যাবে ভেতরে
আমার–প্রমোদ পদ্মিনী হয়ে প্রতিদিন আমূল বর্ষায় ।
বাসনামন্দির খুলে দিলে কখন সফল হয় শৃঙ্গার ? মধুর উপাসনা ?

দৃষ্টিপাত

স্তন
দু’মুঠো জানালা তোমার ।
উঁকি দিলে অন্তঃপুরে লেলিহান
পরীর পৃথিবী যেন মানবী শরীর ।
কতদূর লতাপাতা ?
বনের পশম ?
নাভির প্রদেশে ছত্রখান
স্পর্শের গন্ডগ্রাম ?
নির্জন ?

চাঁদ, নিভে যাও ।
সিঁদেল চোরের কাছে জোছনাকে
শত্রু মনে হয় ।

সত্যবাক

একদিন পালিয়ে যাবার শুভ শুশ্রষা আমাকে দিয়েছিল
নারীর প্রথম প্রণোদনা
আর তার সশ্রম প্রমোদ মৌন দেহ বরাবর ।
কারাভোগ শেষ করে যে-আসামী ঘরে ফেরে
তার মতো বিহ্বল সূর্যকে বুকে নিয়ে
বুঝেছি, যৌবন বড়ো বেপরোয়া ।
নিজের দেহের কাছে পরাজিত না হলে প্রেমিক
ঘনিষ্ঠ আঙুল ধরে নারীও কি পায় বলো আমূল সাহস ?

অন্ধ পরিভাষা


মাতামুহুরির অজানা স্মৃতির মতো এই প্রেম উত্তাল অথচ দৃশ্যহীন
তাই আমি অন্ধজন–তোমার সুষমা জুড়ে যে-আগুন ফলনের গান গেয়ে ওঠে
তাকেই যৌবন বলে জানি, চুমু খাই রৌদ্র নিরূপিত প্রেমের আশায়
তবু রদ্দুর যতটা দেহান্তরে আকীর্ণ জোছনা হয়ে ঝরে পড়ে
তারও বেশি পুড়ে যাই; শুরু হয় রাত্রি বিগলন…
তখন ঘনত্ব বাড়ে পাখিদের; নেচে ওঠে শরীরের
গোপন চড়ুই…

 নৈশকালীন

রাতের নৈঃশব্দ্যে
ব্যাঙ ডাকে
টিনের চালে ঝিরি ঝিরি বর্ষার সিগন্যাল
আকাশ ভাঙলে পরে
প্রথম যৌবন-ভাঙ্গা সঙ্গমের মতো
সাঁতরাবো,
গুমোট মেঘের মতো শুয়ে আছো কেন ?
পেলব সমুদ্র হও ।
শরীর মন্থনে জল পড়ে;
পাতা, তুমি কেন নড়বে না আজ ?